Wednesday 28 March 2018

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে




‘সবিনয় নমস্কারপূর্ব্বক নিবেদন,
অক্ষয়বাবু আপনার উপর রাগ করিয়া আমাকে আঘাত করিয়াছেন এ কথা আপনি ঠিক ঠাহর করেন নাই। অচলায়তন সমালোচনায় আপনি একেবারে মৃত্যুবাণ ছাড়েন নাই বলিয়া তিনি আপনাকে উপলক্ষ করিয়া আমাকেই লক্ষ্য করিয়াছেন। তিনি আপনাকে পরামর্শ দিয়াছেন, যে, হয় এসপার নয় ওসপার – ল্যান্সেট লইয়া ফোড়াকাটা সমালোচনা নয় – খাঁড়া লইয়া একেবারে নিঃশেষে সারিয়া ফেলাই সনাতনী চিকিৎসা। ক্ষত্রিয় মতে সমালোচনা কেমন করিয়া করিতে হয় ব্রাহ্মণকে তিনি তাহার উপদেশ দিয়াছেন এবং তাহার নমুনাও দেখাইয়াছেন। কিন্তু এরূপ সাহিত্যিক গুণ্ডাগিরি যাহারা নূতন হঠাৎ ক্ষত্রিয় হইয়াছেন তাঁহাদিগকেই শোভা পায়, ইহা বুনিয়াদি ঘরের কায়দা নহে। কোনো বিষয়ের দুই দিক দেখিয়া সত্য বিচার করা অকর্ত্তব্য এরূপ অদ্ভুত উপদেশ সনাতনী বা নূতনী কোনো সংহিতায় আজ পর্যন্ত দেখা যায় নাই। ইহা নিতান্তই ক্রোধান্ধতার উন্মত্ত প্রলাপ।
এরূপ রচনা পড়িলে আমার লজ্জা বোধ হয়। কারণ, যিনি লেখক তিনি বয়োবৃদ্ধ। তিনি হঠাৎ অসংবৃত হইয়া উঠিলে অত্যন্ত অশোভন হয়। মানুষ বিচলিত হইলেই তাহার দুর্বলতা প্রকাশ হইয়া পড়ে – কিন্তু সেটা যদি সরলভাবে প্রকাশ পায় তবে তাহাতে তেমন দোষ হয় না; যদি স্বরচিত বিচারকের আসনের উপর চড়িয়া বসিয়া বিচারকের ভড়ং করিয়া অন্তর্দাহকে অসংযতরূপে ব্যক্ত করা হয় তবে সেটা লজ্জাকর হইয়া পড়িবেই। কারণ, নির্লজ্জতার মতো লজ্জাজনক আর কিছুই হইতে পারে না। তিনি ছাড়া বঙ্গসাহিত্যে আর কেহ সমালোচনা করিতে জানেন না এই অভিমান এমন প্রগলভভাবে লেখক যদি প্রকাশ না করিতেন তবে তিনি রাগের মাথায় যাহা তাহা যেমন তেমন করিয়া বলিলেও আমাদের পক্ষে এমন সংকোচের কারণ হইত না। বাদী প্রতিবাদীতে মাথা ফাটাফাটি হইয়াই থাকে কিন্তু ন্যায়পরতার অহংকার ঘোষণা করিয়া জজ সাজিয়া কেহ লাঠি হাতে দাঙ্গা করিতে আসিলে তাহাতে যত বড়ো দুর্ঘটনা ঘটুক তথাপি তাহা প্রহসন হইয়া দাঁড়ায়।
অক্ষয়বাবু যাহাকে যথার্থ সমালোচনা বলিয়া প্রচার করিতেছেন সেরূপ সমালোচনা আমি যত সহিয়াছি এমন বোধ হয় আর কেহ নহে। তাহার দ্বারা সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি সাধন হইয়াছে কিনা সে বিচার আমি করিতে চাই না; কিন্তু আমার তাহাতে অনিষ্ট হয় নাই, ভালোই হইয়াছে। একান্ন বৎসর বয়স নিতান্ত কম নয় – আশা করি, আরো যখন বয়স হইবে তখন প্রবীণ বয়সের প্রগলভতার অধিকার দাবি করিয়া নিজের চিত্তচাঞ্চল্যকে সাহিত্যের প্রকাশ্য সভায় অনাবৃতভাবে উপস্থিত করিতে লজ্জাবোধ করিব। দেশের প্রবীণ সমালোচকদের হাতে যদি প্রশংসা লাভ করিতাম তবে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যক্ষেত্রে আত্মসংবরণ করা হয়তো উত্তরোত্তর অসাধ্য হইত।…'
ইতি ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৩১৮ [১৩ ডিসেম্বর, ১৯১১]
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উদ্ধৃত, শোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়-সম্পাদিত, পত্র-প্রসঙ্গ, রবীন্দ্রবীক্ষা : ১০ পৌষ, ১৩৯০, পৃ ২১-২২।

সম্পাদকীয় দপ্তর - বেবী সাউ   মণিশংকর বিশ্বাস   শ্যামল ভট্টাচার্য   
                                           হিন্দোল ভট্টাচার্য

স্মরণ




                                               "এখন ওসব কথা থাক

এক লক্ষ বছর সঙ্গে থাকার পর সাব্যস্ত হবে, তুমি আমার কি না।
ওসব কথা এখন থাক।
এখন চলো মিকির পাহাড়ে বুনো কুল পেকেছে,
চলো খেয়ে আসি ।
লাল রুখু চুল
সূর্যাস্তের মধ্যে
অর্কিডের উজ্জ্বল শিকড়ের মতো উড়ছে।
-দেখি দেখি, তোমার তামাটে মুখখানা দেখি।

সূর্য এখনি অস্ত যাবে। পশুর মতো ক্ষীণ শরীরে
আমরা হাঁটু পর্যন্ত জলস্রোত পেরিয়ে চলেছি-
জলস্রোত ক্রমশ তীব্র..........কনকনে......"


আবার একটি নক্ষত্র পতন। সেই নক্ষত্র কবি মণীন্দ্র গুপ্ত। বাংলা সাহিত্যে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি বাংলা সাহিত্যকে একটি অন্য মোড়ের সঙ্গে পরিচিত করায়। প্রবহমান ধারাকে নিয়ে যায় আবহমানতার দিকে।

মণীন্দ্র গুপ্তর জন্ম 1926 সালে। অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলায়। কৈশোর কাটিয়েছেন অসমের বরাক উপত্যকায় মামার বাড়িতে। পড়াশোনা শিলচর এবং কলকাতায়। ইংরেজি সাহিত্যে বি এ করার পর তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

কবিতা লিখেছেন চার-এর দশক থেকে। প্রথম কবিতার বই ‘নীল পাথরের আকাশ’। তাঁর কবিতা, গদ্যে অন্য একটি স্বাক্ষর পাওয়া যায়। সহজেই পাঠকের নজর কাড়েন তিনি। বাংলা কবিতার তৎকালীন অভিমুখের সম্পূর্ণ বিপরীতেই অবস্থান করছিল তাঁর রচনা। এর পরে প্রকাশিত হয় ‘মৌপোকাদের গ্রাম’, ‘লাল স্কুলবাড়ি’, ‘ছত্রপলাশ চৈত্যে দিনশেষে’, ‘শরৎমেঘ ও কাশফুলের বন্ধু’ অত্যাদি কাব্যগ্রন্থ। নয় এর দশকের শুরুতে  বের হয় তাঁর আলোড়ন তোলা প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘চাঁদের ওপিঠে’। 

 প্রকাশিত হয় আত্মজীবনী ‘অক্ষয় মালবেরি’-র প্রথম খণ্ড। তিন খণ্ডে বিন্যস্ত এই গ্রন্থ  বাংলা সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

সম্পাদনা করেছেন ‘পরমা’ পত্রিকা। কবি রঞ্জিত সিংহের সঙ্গে যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘এক বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতা’-র মতো সংকলন। হাজার বছরের বাংলা কবিতা নিয়ে ‘আবহমান বাংলা কবিতা’ একটি সংকলন তৈরি করেন, যা একটি বিরাট সময়কে বেঁধে রেখেছে। 
২০১০ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমী দ্বারা ভূষিত হন, এ রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান "রবীন্দ্র পুরষ্কার"-এ তার "টুংটাং শব্দ নিঃশব্দ"-(২০০৫) এর জন্য। ১১'তে "সাহিত্য আকাদেমি" প্রাপ্ত তার কাব্য গ্রন্থটি ছিল "বনে আজ কনচের্টো"। 

তাঁর অন্যান্য কাব্য গ্রন্থের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল .........

‘নীল পাথরের আকাশ’, ‘আমার রাত্রি’, ‘মৌপোকাদের গ্রাম’, ‘লাল স্কুলবাড়ি’, ‘ছত্রপলাশ চৈত্যে দিনশেষ’,‘শরৎমেঘ ও কাশফুলের বন্ধু’, ‘নমেরু মানে রুদ্রাক্ষ’,‘মৌচুষি যায় ছাদনাতলায়’, ‘এক শিশি গন্ধহীন ফ্রেইগ্রানস’, ‘নিরক্ষর আকবর’

১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। 

নিভৃতচারী, মঞ্চ-বিমুখ, আপসহীন এই উজ্জ্বল সাধক নক্ষত্র, মণীন্দ্রবাবু রেখে গেলেন আবহমান বাংলা সাহিত্যের জন্য আশ্চর্য কিছু অধ্যায়, আশ্চর্যতম গ্রন্থের কাল-কে। 

' ভিতরে একা, সুখী না, দুঃখীও না।
দশদিক অসীম শূন্য এবং চিররহস্য।'
বয়স তাঁকে বশ করতে পারেনি কখনো। বরং ঝলসে উঠেছিল তাঁর কলম। কখনো কবিতার সহস্র কুঠুরির ভিতর, কখনো ভাষার অন্দরমহলে আরো গভীর ভাষায় এক সুদূরতম সত্যের অন্বেষণে, মহাসময়ের দিকে তাকিয়ে থাকা তাঁর চোখ যখন অনুদিত হয়েছে তাঁর একটির পর একটি কবিতায়, আমরা আশ্চর্য হয়েছি। চিরকালীন এক ঘোরের মধে ডুবে গেছি। তাঁর আপামর কাব্যজীবন হল সেই অক্ষয় মালবেরি, এক অমৃত-কণা, যার জন্য সব ভাষার সব সময়ের সাহিত্য অপেক্ষা করে থাকে।

চলে গেলেন এক শান্ত, সুন্দর, আকাশের মত সহজ মহৎ উদার এক মানুষ। এক কবি।
আপনাকে প্রণাম কবি মণীন্দ্র গুপ্ত। আমরা ভাগ্যবান, বাংলা ভাষায় আপনার মত এক কবিকে পেয়েছি। এক চিরকালীন কবি। নশ্বরতা, যার কাছে হেরে যায়।
আসুন তাঁকে পড়ি। আরো পড়ি। তাঁকে কাছে রাখি আমাদের।


ফিরে পড়া কবিতা : অনন্য রায়-এর কবিতা

( আলোর অপেরা ) ||১৭||

দিগন্তের সবুজ চাঁদ নীচু হয়ে চুমু খেলো
ধানক্ষেতের অবলুপ্ত ঠোঁটে;
গম্বুজের সৌগন্ধ বুকে বয়ে চলে নদী
ঝরাপাতার অবিরাম শব্দে আচ্ছন্ন করে নিজেকে।

সিল্কমসৃণ স্বপ্নের দাঁতগুলো ক্রমশ তামাটে হয়।
আমার করতল থেকে জন্ম নিয়ে প্রজাপতি এবং ছাই
সেই বিশাল হাঁ-মুখে অজানার গর্তেলুকিয়ে যায়
অন্ধকারে- স্তব্ধতার অবয়বে।

জলপাই-অরণ্যের প্রগাঢ় স্তব্ধতা,
একট লম্বাটে ভাঙা মদের বোতল ও নিঃসঙ্গ গীটার,
কিছু নরখাদক নথিপত্র এবং ইস্পাত
সহসা ক্যাক্টাসের ঝড়ে উঠলো কেঁপে;
যখন জ্যামিতিক আয়নার চারপাশে
একঝাঁক পায়রা গেলো আচ্ছন্ন মেঘের মতো উড়ে ।

ঘুমোও অনন্য ! ঘুমোও কেননা রাত্রি বড়ো দীর্ঘস্থায়ী-
যতক্ষণ-না তোমার ঘুম কমলালেবুর মতো হয়ে যায়
এবং কবরের ঘাসের মতো তোমার স্বপ্নগুলো চাঁদের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়
এবং তোমার ঠোঁটের ওপর শ্যাওলা জমে,-
ঘুমোও তুমিঅবগুন্ঠিত বিস্মৃতির মতো,
যেখান দিয়ে লাক্সনপ্রাচীর ছুটে গেছে চূর্ণবিচূর্ণ দ্রুতব্রম্ভান্ডের দিকে....
আর পরিদৃশ্যমান তোমার ব্রোঞ্জের বিশাল বিস্মৃতি
শ্বেতপাথরের খিলানের মতো তোমাকে করে দিক দীর্ঘ গোলাকার।

হাওয়া এখন তার পিচ্ছিল সবুজ আর্দ্র স্মৃতিচারণায়
মুড়ে রাখবে আমাকে
আর মুহূর্তের পর নুহূর্ত- অনন্তকাল
অরেঞ্জ কার্পেটের ওপর পড়ে থাকবে আধখানা মৃত্যুভক্ষ্য রক্তিম আপেল!



( আলোর অপেরা ) ||১৮||

আবহমান রেললাইনের অন্ধসড়কেবাগীশ্বরী ধূলোর মাতৃক্রোড়েপড়ে
রয়েছে অশণাক্ত একটা মুন্ডুহীন লাশ এবং তাকে উবু হয়ে বসে গভীরভাবে
তদন্ত করছে একটা ন্যাংটো কচি বাচ্চা ।

ঘড়ির শব্দ।                       
লাশটার কবন্ধ ক্ষতস্থানে থকথক করছে রক্ত....
ঘড়ির শব্দ।
একটি কচি আঙুল সেই ক্ষতমুখের গর্তে প্রবেশ করে...
ঘড়ির শব্দ।
বাচ্চাটা জিভে আঙুল ঠেকিয়ে সেই রক্তের স্বাদ চাখে এবং বোকার মতো
ফ্যালফ্যাল করে পাঠকের দিকে তাকিয়ে অল্প হাসে।
বাচ্চা এবং লাশটার ওপর দিয়ে ভোরের হু হু অগ্নিবর্ণ তেজষ্ক্রিয় হাওয়া
বইতে থাকে যেন প্রেতের চিৎকার।
শুধু ঝরাপাতার ওড়াউড়ি ।।
     
( আলোর অপেরা ) ||১৯||

শব ব্যবচ্ছেদ করো : অন্ধ-বালিকার থার্মোমিটারের গর্ত দিয়ে
দ্যাখা নীল জ্বর
আত্মমেহনের শাদা কুমারীর ছেঁড়া চোংতন্তুকাটা স্তনউরু,
উড়ন্ত নিতম্বপরিচ্ছদ
কারা প্ররোচিত করে কঙ্কালের রণলিপ্সানারকীয় আত্মহত্যা,
বারাসত-বরাহনগর
বোবা ভ্রুণঠ্যাংবিম্ব : ভাঙা সাম্রাজ্যের কামজ্বরে মুগ্ধ হীরের সুন্নত!

শব ব্যবচ্ছেদ করো : মকরকোষের আঁশ দ্রুত ম্যাডোনার মূর্তি
গেয়ে ওঠে নক্ষত্রের শিঙা
ভাঙা করোটির নীল ক্ষুদে-ক্ষুদে শিঙার গোঙানি
কঙ্কালের ডানা ছেঁড়ে উড়ন্ত পরীর সেলুলোজ ছেঁড়ে সেঁউতির
দেবদূতঅন্ধ ডিঙা
চাঁদের চকচকে রুপোরশ্মি জ্বলে সমুদ্রের ঢেউয়ে আমি
সেটুকু করেছি রাহাজানি।.......( আংশিক )


( আলোর অপেরা ) ||২১||

নিস্পলক বসে থাকা : কফি ও টোস্টের বিবমিষা ;
নীল কাপড়ের স্তূপ ছড়িয়ে পড়েছে এলোমেলো ;
মেঘের মেখলাপড়া বিষাদ-আরুঢা মোনালিসা
সহসাদূরত্বমুগ্ধনিঃসঙ্গ আপেল কামড়ে খেলো ;

সারাদিন সারারাত এই মৃত্যুযাপনের চিহ্ন আঁকাবাঁকা
নৈঃসঙ্গ্য উতকীর্ণ করে উভয়ের শিলীভূত ভাস্কর্যভঙ্গিমা : ভাঙা সাঁকো ;
নীল কাপড়ের স্তুপ মেঘ মোনালিসা এলোমেলো বেঁচে থাকা
স্তব্ধতা বুনন করে বিবাহের ভাঁজে-ভাঁজে ভস্মশেষ : নিস্ফল টোব্যাকো !

( আলোর অপেরা ) ||৫৩||

নাভির গভীরে ছিল ৫৮ উনুন
প্লাস-মাইনাসের জিহ্বা ঈশ্বরের লেহনভঙ্গিমা ৪০৭
২ নারী  ৬ কুমার ১২ পাখি সাদা কালো তন্তুসমুদ্রের অন্ধনুন
৪৩ বাতিদান নক্ষত্রশিকড়ময় নতুন পাতার গন্ধ;
                      বজ্রের ডালপালাসাদা হাত
অরণ্যের খাঁ খাঁ স্বর ৮৫ উইলোবন ৯৭৪ ধূলোবালি
১৯৮-সংলগ্ন গির্জাচূড়া কালো কাল ম্লান কন্টিকারি
জড়িয়ে রেখেছে ৫২৭ বল্কলে ইব ঈশ্বর-মাকড়সা ঊর্দ্ধবাহু
৮৪৯ ম্যাজিশিয়ান আলখাল্ল মর-অ্যাকিলিস ৯০ গোড়ালি
৪৭৩ নীল মেঘ থেকে ঝরে পড়ে শারীরিক বিভাজনউড়ন্ত ক্যানারি
সংখ্যার ক্যাওড়ামি থেকে ঈশ্বর অনন্তবিন্দুকরোটির রাহু।

কিমিতি-বাওয়াল থেকে উঠে আসে মায়াবলোকন লোর্কা ;
                                কস্তুরীর বিষ;
ঈশ্বর বিমূর্ত জ্রেবাভাবনার কেন্দ্রবিন্দু ৭৩৯ গোলাপী ঘা
১৯ ছাতার নিচে তেতো পেট্রোডলারের বিষাদপ্রতিমা
                                   অর্হনিশ
ঈশ্বর শ্বাশত শূন্য- ৭৯৪ নিয়তি ছড়ায় ক্লিববম্ভ্রার কুয়াশা।।
         


দিনযাপন....

প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠুক নতুন পাতার মতো সবুজ সতেজ
এবং মৃত্যুর মতন ভয়ঙ্কর।
কবিত্ব-ফবিত্ব আমার নেই                      
শুধু চাবুক আর চাবুক আর চীৎকার-
ইলেট্রিক ইঞ্জিনের সশব্দ অন্ধকারের উড়োনচণ্ডি চমকে
মসৃণ চাদরে ঢেকে রেখেছে আমায়
কাকতাডুয়ার মতো বেমক্কা নির্জন রাত্রি,
আর সামনে ঝুলছে জায়মান অতীত
বরফের লিকলিকে হিম সাপের মতো,
চীনাবাদামের নৈঃশব্দ্যের মতো।

এই টানাপোড়েন আর ভালো লাগে না
কী অসহ্য এই পোড়া মাংসএই মৃত্যুএই মদ,
নারীর শরীরময় আনন্দের জঘন্য সন্ত্রাস।
আজীবন রুটির ধান্দায় কলে কারখানায় বন-বাদাড়ে ঘুরে
তোমাদের ফিরিয়ে দিতে একতাল মাংসল ভালোবাসা
জবুথবুর মতো বিছানায় শুয়ে ঝড়ের স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগে না আর
এই টানাপোড়েন আর ভালো লাগে না।

এখন স্বেদারু আর কাঁচপোকার স্তব্ধতাকে চিরে ফ্যালে
অদ্বৈতাচারী চাবুকের পর্যুদস্ত হিসহিসে বিদ্যুৎ,
ডিমের খোলশের মধ্যে মৃত্যু পেয়েছে নির্বাক বিছানা
চতুর্দিকে ঘিরে ধরেছে পুলিশের মতো সশস্ত্র নিয়তি
কালো দেয়ালের বিমূঢ কঠিন পরিহাসে।

ঋত্বিক ঘটকের ছবির মতো বিপন্নতা বুঝি কাটিয়ে এলাম
কাটিয়ে এলাম অজস্র টানাপোড়েন আর শীতরাতের হিম নিঃসঙ্গতা
প্রতিটি মুহূর্ত ফেটে জন্ম নিচ্ছে এখন নৃমুণ্ডের উজ্জ্বল বিস্তৃত আকাশ,
আর পচা শ্যাওলার মতো সবুজ নতুন পাতায়-পাতায়
কাঠবিড়ালীর মতো মেঘ কেটে ছুটছে চাঁদ লাফিয়ে লাফিয়ে-
নিয়তির কালো পুলিশের সশস্ত্র কঠিন পরিহাসে।
                                      





টারান্টেলো...

আমি কলঙ্কিত করবো নম্র শাদা কাগজের কুমারী স্তব্ধতা;
অস্তির শিশিরবিন্দু মুঠো করে মিশে যাবে ঘাসে;
আক্রোশে সৃজন করবো শব-ব্যবসায়ী এক ছন্দের দেবতা
গ্রন্থের কুয়াশা ছিঁড়ে জ্বলে উঠবো বজ্রমেহ ঊর্ণার আকাশে;

আমার শরীরী মেধা স্বপ্নহত্যা জ্বলে উঠবে প্রজাতির ঢেউয়ের চুল্লিতে
মাংসের বন্দীত্ব বস্ত্র-পরিহার করে যাব হরফের ব্যক্তিগত স্নানে;
ইভনিং পুরোকায়স্থের সঙ্গে প্রতি শনিবার যাব মৃত্যুনীল নিষিদ্ধ-পল্লীতে;
নেহাৎ ছলনাবশে আত্মহত্যা করতে যাব সব পেয়েছির ইস্টিশানে
          
কুমারীর গর্ভকোষেএভাবে অভ্যাসমুগ্ধ মৃত্যুযাপনের থেকে চাই রুপান্তর;
আমার যা-কিছু নেই তারই জন্যে মোহগ্রস্ত আমি পূজো করবো প্রিয়
অজানার ক্ষত;
অক্ষরের মেঘাবৃত সৌরউরসের ঘুমে উঁকি মারবে অনন্য ঈশ্বর-
বাথটাবে ফেনার মধ্যে স্নানরত মাকড়শার মতো!


চিংড়িমাছ-

জলের প্রেমিক তুমিচিংড়িমাছজলের অতলে নর্তকীর
মতো তুমি জাপানী ফ্লাওয়ার ভাসে চীনা মৃৎশিল্পীর চিত্রার্পিত
দুটি শূঁড় কথা বলে জলগর্ভে শৃঙ্খলের সঙ্গে নিয়তির
অশ্রুত সংলাপতুমি এঞ্জিনের মৃত্যুশব্দে প্রলুব্ধবিস্মিত।

জলের প্রেমিক তুমিতবু যেন ঈডিপাসজলের সন্তানঝিকিমিকি
কালের ঘণ্টার মতো ঢেউয়ে-ঢেউয়ে অবিরাম নাচ এলোমেলো
যখন জালের মধ্যে ধৃত তুমিঅসহায়একান্ত প্রতীকী
মূঢ আত্মহননে চুম্বনে যেন সশস্ত্র ওথেলো।




২৭৪৮--

মনে করো দু-হাজার সাতশো আটচল্লিশ সনে আমি গুহামানবের দেঁতো
নিশ্চেতনে
আবার এসেছি ফিরে লাল কৃষ্ণচূড়া ছিঁড়ে নক্ষত্র রকেটে ছুটে কোয়ান্টাম
                                           শান্তিনিকেতনে
শিশুরা সহাস্যে বলবেঃ কেমন লাগছে এই পৃথিবীর ইস্পাতের ঘাসে
ভেসে যেতে-
তোমাদের কালে নাকি ছিলো মৃত্যু আমে এক ফুটো পাশবালিশছিলো
                     হিরোশিমা নামে এই মার্বেল খেলার ক্ষুদে পিল?
আমি হতবাক হয়ে চেয়ে দেখি উদ্ভিদের কথা বলছে সুইডিশ ভাষায় আর
                      কোষপ্রযুক্তিশাস্ত্রের রভসে ঝিলমিল
সাঙ্গীতিক হাই তুলছে মঙ্গলের নরনারী বৃহস্পতি-রোবোটেরা চেখে দেখছে
           শ্রমের অর্কেষ্ট্রা ! তাইঃ কী রকম ভালো লাগবে খেতে
কালের ক্যাপসুল গিলে জেনে নিতে ভূত-ভবিষ্যত ? আমি ভাবি,
                       আর তখনই শিশুরা
আমাকে প্রেজেন্ট করে কুটকুটে আপেল এক যাতে লেখা আছেঃ
                    নাং-বিংশশতকের উপদাংশ-কারাগার !
আমি সেই তেজস্ক্রিয় আপেলে কামড় দিয়ে দেখিঃ নদীমাতৃক বাংলার স্রোতে
দাঁড় টানে পন্যচারী মৃত্যুর পরস্ত্রী-অন্ধকারঃ
এ-স্পর্শবিভ্রমে আমি মাথা রাখি সঙ্গিনীর আধেক বালিশে আর সে আমার
                    ঠোঁটে ছোঁড়ে বজ্রদন্তী-চুম্বনের স্বপ্নের ধুতুরা!
কে জানে আবার কবে দ্যাখা দেবে জাগরনে দু-হাজার সাতশো আটচল্লিশ সেই
                    বিছানায় লাল কৃষ্ণচূড়া-
সারাদিন সারারাত আমি অপেক্ষায় আছি তার ।


ভেরোনিকা...

যে কোন রহস্যঘন ধ্বনিঃ তার নাম ভেরোনিকাঃ
ভেরোনিকাভাঙা ঢেউ চূর্ন করে গেরস্থপ্রপাত
মাংসের অনন্য সংজ্ঞা না-নির্ণয় করেআমি যেই
স্পর্শ করি বর্ণমালাঅন্ধ ঢেউশর্করার দাঁত
দেখি আক্রোশের শাদা ফেনা ছাড়া আর কিছু নেই
আমিষ মকরগর্ভে নিস্ফল উপলজন্মনীল কান্নামর-প্রহেলিকা ;
জ্বলন্ত ঝিনুক ভাসে সংকেতের স্রোতেঃ তার নাম ভেরোনিকা !

অপ্রাপ্তবয়স্ক...

যদি ফিরে আসে সেই ভ্যানিলার গন্ধমাখা কুহেলি বালকবেলাছেদো হরিদ্রাভ
চাই না ফেরত তাকেমহাকাল ! যা নিয়েছোনাও;
                           আমি কেবলি ভবিষ্যে ভেসে যাব।
উনিশশো পঞ্চান্ন ! আর কখনো আসবে নাবলোকথা দাও স্ফীত গর্ভমেঘ
কখনো আসবে না আরকথা দাওবৃথা জন্ম কলকাতায় নিকিতা ক্রুশ্চেভ!
কী নিস্ফল ঘনঘটা ! স্টূপিড-জন্মের মৃত্যুকাম !
( যেভাবে সাতাশে এসে সহসা জেনেছি আমি শৌখীন তুখোড় আলট্রা-বাম !)
তেমনি কি মনে পড়ে আমার জন্মের হর্ষে দাদুর গলায় কোনো
                                শ্লেষ্মা ছিল কি না?
জেব্রা-ক্রশিঙের দিকে তখনো যেতো কি দৌড়ে কামাতুর অন্ধ
                                তার হাতছড়ি-বিনা?
কিছুই পড়ে না মনে আমি শুধু ক্যালেণ্ডারের সংখ্যার শৃঙ্খলা হয়ে
                                লেপ্টে যেতে থাকি;
(অন্ধ আফ্রিকার দিকে তারো আগে উড়ে যায় সূর্যমূখী ক্ষুধাতুর লুমুম্বার পাখি!)

এভাবে ক্রমশঃ আমি বড়ো হতে থাকি নরখাদক-ঐতিহ্যে।
ঘোষাল স্ট্রীটের এঁটো গলি দিয়ে হেঁটে যায় ফিরিঅলাকচি কবি,
বিখ্যাত মেয়রদিশী হিজড়ে
সকলেই গাল টেপে কেউ বলে; ব্যাটা হবে রবিঠাকুরের মতো সম্ভ্রান্ত কাবাব!
এভাবে ক্ষয়িত হয় নেকা-বোকার-পরা দিনগত অভ্যাসের পাপ।
তারপর যখনই আমি সূর্যের ঝরোকা দিয়ে তাকিয়ে দেখেছি বাইরে-
অ্যানথ্রপো-বিকেলে;
দেখেছি ফুটপাতে শুধু রক্তাক্ত শ্রমের ছকে স্বপ্ন আর মৃত্যু স্পর্শাতুর দাবা খেলে।

ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে জামিরের বন থেকে সুইনহো স্ট্রীটের এঁদো গর্ত ;
হতস্পন্দে রর্জাস রোগচন্দ্রশেখরের গুগলিপ্রাত্যহিক হাঁপানির
হলদে নাভিশ্বাস-ওঠা মৃত্যুর ছেনাল মায়ামর্ত্যে
কখনো পাইনি খোঁজ অস্তিজিজ্ঞাসার এক হোমিওপ্যাথিক ওষধির।
রক্তমাখা পুলিশনাপিতবেশ্যাপৌরস্থপতির ছেলেপুলেদের হেঁজিপেঁজি ভিড়
সঙ্ঘ-সোলারিস থেকে আমার নিভৃত স্বপ্নে ছুঁড়ে মারে আলোর বুলেট!
ইতিমধ্যে পার্টি-ভাগবাবা ও মায়ের ঝগড়ারুশ চীন বির্তকের নোনতা ওমলেট ;
কিম্বা মনে পড়ে সেই পাড়াতুতো জ্যাঠামনিযে আমাকে স্বতোঃপ্রনোদিত কাছে ডেকে
আমার উপাস্য কণ্ঠে রবীন্দ্র সংঙ্গীত শুনে বলেছিলো;
                          এমন বখাটে গান শিখলে কোত্থেকে?
লোকরি কবিতা পড়াস্কুলবালিকার স্ফুটস্তনে হাতঅথবা ইডেনে-দ্যাখা
                          রোহন কানহাই
( ব্লু রিবাণ্ড অমরত্ব না পেলে কী ক্ষতি করবে ক্ষনিকের স্ফূর্তির চোলাই?)
এসবের থেকে ক্রমে দূর সরে এসে আমি কখনো খুঁজিনি পরপারে আদিপিতা;
অথবা চাইনি লিখতে চেরী-ব্লসমের মতো চকচকে কবিতা।

এভাবে বছর ঘোরে অচিকিৎসা শ্রান্তির রভসে।
রক্তপাতে ভেসে যায় সমুত্থিত বাংলার প্রান্তর আমি ঘাপটি মেরে
                               ঘরে থাকি বসে !
দাদার নকশালপন্থাঃ বারাসতে হাত পা বাঁধা আটজনের লাশ ;
( তারা তো আমার কেউ নয়আমি ঈশ্বরের স্বপ্নদোষে
চমৎকার রয়েছি ! সাবাশ ! )

চোখ বুঝে অতঃপর পরিচারিকার সঙ্গে ( শ্রেনীসমন্বয় হেতু) করেছি সঙ্গম
তুষারের সঙ্গে ঘোরা বেশ্যাপল্লী ম্যানড্রেক্স সাপের ছোবল কিম্বা
           কর্ক তোর মহার্ঘ্য অর্ফিউস দেখে মৃত্যুর ক্ষুধার উপশম
করেছিসঞ্জয় পিন্টু এসে জানিয়েছে ঘৃনা বাহাত্তুরে নির্বাচনে রাম-কুপোকাৎ       
মৃত্যুর ওপার থেকে চলে এসো বলে হাতছানি দ্যায় দিব্যযোনি স্বাস্থ্যের জল্লাদ-
(প্রিয়দর্শিনী সেই ককতোর নায়িকা নাকি?)..... আমি তার
                                 আর্দশ স্তব্ধতায় ভেসে যাই ;
আমার সুস্বাদু মাংস ইচ্ছা চিন্তা বাস্তবতা কেটে কিমা করে শ্রান্ত স্বপ্নের কসাই !

বিকলাঙ্গ স্পৃহা নিয়ে অনেক উড়েছি আমি বারদুয়ারী বের্লিন নিউ আলির্ন্স থেকে
                                          খালাসিটোলায় ;
পৃথিবী গিয়েছে ভরে টোকো মদনৌ বহরশালপাতাশম্ভু মিতলঙ্কা ও ছোলায় ;
ইয়াঙ্কিদের ভিয়েৎকং-হত্যার বিপক্ষে আমি কখনো করিনি প্রতিবাদ;
জুজু-সঞ্জয়ের ভয়ে বোধিদ্রুমের নিচে পাৎলুনে প্রস্রাবরত লক্ষ করি রক্তমাখা
                                          কোজাগরী চাঁদ !
( উভলিঙ্গ-স্কুল ছেড়ে যখন পাকড়েছি পুরুষকার-পদ্য তখন বয়েস প্রায়
                                         বালখিল্য-ষোলো !
বাথরুমে আরশোলা হত্যা করে ক্ষিপ্ত কল্পনা করেছি বুঝি এ দেশে উর্বর
                                     কৃষিবিপ্লব সংগঠিত হলো!)

কী লিখেছি সারাবেলা না-কবিতানা-প্রবন্ধগল্প বা সঙ্গীতছবিও না !
বিশুদ্ধ কবিতাপন্থী সমালোচকের দল আমাকে দেখেই তাই
                         লিখে রাখে আগেভাগেঃ এখানে পিসাব করিও না  !
তবুও চৌচির ছাড়ানিজেকে নস্যাৎ ছাড়ানিয়মতান্ত্রিক কোনো
                                       ধিক্কার জানি না ;
প্রাপ্তবয়স্কের কোনো নস্ট্যালজিয়া নেই আছে ভবিষ্যতঃ রক্তমাংস-বিনা!
এই তুচ্ছ বেঁচে থাকাঃ অপ্রাপ্তবয়স্ক ঠাট্টা- একে আমি
                                  আষ্টেপৃষ্ঠে সাপটে ঘেন্না করি ;
তবু এই বেঁচে থাকাঃ এই বেঁচে থাকাটুকু একমাত্র সুন্দরঃ সত্য ;
                                    সাক্ষী থাকে মৃত্যুর প্রহরী!

অনন্য রায়(৩০ নভেম্বর, ১৯৫৫ - ১৭ অক্টোবর, ১৯৯০) :  প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ছ'টি। সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কাব্যবোদ্ধাদের মতে একটা সময়ে অনন্য রায় 'মাইকেলোচিত' একটি স্থায়ী ও উচ্চ অধিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত যে হবেন, তা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এবং এই সিদ্ধান্ত বিদগ্ধ মহলে স্বীকুত- অনন্যর এই কাব্যনাট্য বা নাট্যকাব্যের 'ট্রিলোজি'(আমিষ রূপকথা, ১৯৭৯; চুল্লীর প্রহর, ১৯৮৩; আলোর অপেরা, ১৯৮৯)-টিই তার একমাত্র উদাহরণ।