সত্যিকারের বই
ভাবছেন,
সত্যিকারের বই সেটা আবার কেমন কথা! পৃথিবীতে যা আছে সব সত্যি মিথ্যে মিশিয়ে আছে।
মিথ্যেকারের বইও আছে অন্তত আমি মনে করি,যারা বই এর মতো দেখতে কিন্তু বই নয়। যাই
হোক নয় বই বা বই নয় এর কথা বলতে আমি এটা লিখছি না। ফেসবুকে আমার দুটি এইমুহূর্তে
পড়া বই এর কথা লিখেছিলাম, হিন্দোলদা আমায় বলল বিস্তৃত ভাবে লিখতে ফলে ভালই হল
কিন্তু এখানেও বিস্তৃত কিছু না বলার চেষ্টাই করব। বেশী বললে লোকজনের গাগুলোয়
দেখেছি, কারণ গোগলযুগ তো, তারা এমনিও শোনে না আর বেশী বললে বোধ করি পরিত্যাগ করে।কেউ
বললেও কারো বই নিয়ে দীর্ঘ লিখতে গেলেই আলস্য আসে , কিছু লাইন লেখার পর মনে হয় মন ঠিক এটাই বলছে তো না কি কোথাও আলোচনার গতিতে
ফাঁকি হয়ে যাচ্ছে তবে এই বই দুটি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লিখলাম।
যাই হোক আমার
ভাল লাগার এবং এইমুহূর্তে কিছুটা ঘোরে যাওয়ার দুটি বই হল বিভাস রায়চৌধুরীর “প্রেম”
এবং রাহুল পুরকায়স্থ -এর “ভস্ম মাখি মাটিতে শুই” । বই দুটির প্রকাশক যথাক্রমে
বইতরণী ও ভাষালিপি।
প্রথমে কবিতার
বইটির কথা বলি ; বিভাস রাইচৌধুরীর “প্রেম” । বইটির গাত্র আপনাকে বইটির দিকে তীব্রভাবে
টানবে এর ভেতরে-বাইরে হিরণ (হিরণ মিত্র) দার তুলির ছোঁয়া অপূর্ব সাযুজ্য সৃষ্টি
করেছে বলাই বাহুল্য। এবার আসি কবিতার কথায়। বিভাস
রাইচৌধুরীর কবিতা পড়েননি এমন কবিতাপ্রিয় মানুষ আশা করি বিরল। তার অন্যান্য অনেক বই
–এর মধ্যে শিমুলভাষা পলাশভাষা আমার খুব প্রিয় একটি বই। সেই মুগ্ধতা আর তীব্র ভাব
ফিরে এল “প্রেমে”। যারা নিয়মিত কবিতা পড়েন না নিঃসন্দেহে তারাও এই বই –এর প্রেমে
পড়বেনই। একটি গোটা প্রেম টুকরো টুকরো হয়ে সারা বইতে ছড়িয়ে গেছে। আসলে যে শূন্যতা
এক তীব্র অতৃপ্তির তাই তো প্রেমের সমার্থক, তাই কবি লিখেছেন “প্রেম একরকম শূন্যতা
/মহা মহা মহাকাশে লেগে আছে দেহ/ মানুষ ঝাঁপায়...তবু/ আকাশ পর্যন্ত এসে মুছে যায় সব
নর-নারী”
শরীরে পাগল
রাখা সে এক প্রহেলিকাপূর্ণ ঘন ঘন কুন্ডলীর অনুভূতি, যার ছাইভস্ম না বুঝে আপনি
ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকবেন। ভ্যাবলার মতো বসে থাকা যায় সেরকম এক অমোঘ লাইন
“ভয় করছে না?/
সে যদি হঠাৎ আসে?/ শরীরে পাগল রেখে যায়?”
আরো কবিতার অংশ
“হাত ছাড়ব না
?/ সমস্ত ঘৃণার শেষে/ একটি হাত জেগে আছে জানি,/যার কাছে অমরতা থাকে.../জানতেও চাইব
না / আমার বিষয়ে/কী বলেছিলে কাকে!”
এই বইটা নিয়ে
আর কিছু বলব না ,এইসব কবিতার আলোচনা হয় না, অন্তত আমি পারি না।একটি অনুভূতি তৈরী
হয় যাকে বারবার বলে লঘু করতে ইচ্ছে করে না , মনে হয় ভেতরে ধারণ করি, চুপ করে বসে
থাকি আর জারিত হতে দিই ।কারণ যাকে নিয়ে বেশী বলা হয় তাকে বোধহয় ফুরানো যায়, একে
যাবে না। একটা নিভৃতির রাতে এই বই পড়ে এক চিমটি হাসি আর কয়েক বিন্দু অশ্রু উপহার
পেয়েছি –এরপর সেই বই আর বেশী কী দেবে?যারা প্রেমে পড়েছেন, পড়েননি, প্রেমে বিশ্বাস
রাখেন রাখেন না তারা সকলেই প্রেম পড়ুন ,
এটুকুই,আক্রান্ত করতে পারে এমন একটি বই এই “প্রেম”।
দ্বিতীয় বই ,
গদ্যের বই। রাহুল পুরকায়স্থ প্রণীত “ভস্ম মাখি মাটিতে শুই”!অদ্ভুত একটা মজা খেয়াল
করলাম, এই বইটির প্রথম গদ্যের শিরোনাম অপ্রেমের বই আর অদ্ভূত ভাবে সেই শেষ অংশেও
বিভাস রায়চৌধুরীর কবিতা। ফলে আমার এ আলোচনাও বোধহয় নিয়তি নির্ধারিত।নয়টি গদ্যের
মধ্যে বাস্তবের, ভাষার, স্মৃতির আর মুহূর্তের
মেলবন্ধন ফুটে উঠেছে। কোনো অতিপ্রাকৃত বিষয় নয়। বাস্তবে যা ঘটেছে অথচ
আমাদের নজরের দুর্বলতার জন্য তাদের কে জানিনি বা জানতে পারিনি সেইসব
সাহিত্যসম্পদের খোঁজ মিলবে এই সিন্দুকে। বই শুরু হয় এইভাবে “কবিতাকে পড়ি আমি অন্ধকারে”। জয়দেব
বসুকে নিয়ে শেষ লেখার শিরোনাম “ বন্ধুর অশ্রুবিন্দু আমার বুকে” এক বন্ধু এক
বন্ধুকে কেবল নয় এক কবিবন্ধু আরেক কবিবন্ধুকে ধরে রেখেছে অশ্রুমাখা বুকে---সেখানে
থেকে মৃত্যুর কানাকানি শোনা যায় তবু কবিতা অনন্ত হয়ে সেখানে বেঁচে থাকে। গণকবিতার
থেকে দূরে এরকম এক আখড়ায় কবি (রাহুল পুরকায়স্থ) লিখছেন এক স্মৃতিজারিত গাঢ় গদ্য
সেখানে মিশে আছে তুষার চৌধুরীর সব কনকনে শীতল লাইন যাকে ছুঁলে ছ্যাঁকা লাগে ---সে
এক ঠান্ডার ছ্যাঁকা “ মৃত্যুর আরেক নাম ডোমকাক” । যিনি কবিতার সামগ্রওকেকে বলতেন কিস্যু হয়নি। কবি তথা লেখক লিখছেন অপ্রেমের বই--- যে প্রেমগুলো গোটা
এক জীবন খেয়ে নিতে পারে, সেই প্রেমে না পড়ে কোন খুচরো ঠোঙা প্রেমে আমরা তা ধিন ধিন
তা করি লেখকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আহা এমন অপ্রেমের বই যার সর্বাঙ্গ বিষাদমধুর তাকে
যুগযুগ স্মৃতির কোণে রাখি হয়ত বা! নাহলে তাদের ওপরে ধুলো পড়ে কেন?
এখানে একটি
লাইন লিখেছেন কবি রাহুল পুরকায়স্থ “ ভয়
হয়, আমাদের অপ্রেমের, ঔদাসিন্যের, নীরবতার ধুলো পুরু হতে হতে এই সকল বইও আবছায়ে
চলে যায় কি না!”
এরকম
আশঙ্কাটুকু থাকা খুব জরুরী না হলে কি সব ছাইপাশ খেয়ে লালা ঝরিয়ে হলুদ মজ্জার দিনে
এসে দেখব যা খেয়েছি তার সব ফাটকা আর অপুষ্টি ভরা দেহ আর এক পাও যেতে পারে না !
এখানে আলোচনা
একটা আপেক্ষিক শব্দ, লিখতে লিখতে মনে হচ্ছে বইটা আবার পড়ি। বইটাতে একটা বৈধ
হাহুতাশ আছে যা আমার, আপনাদের সকলের । শুধু প্রতিবিম্বিত করার দায়টা আমাদের।
এসব বই –এর
আলোচনা হয় না তবে এই বইটা না পড়লে আগে আমাদের যে ভুল হয়েছে বা এখনও হয়ে চলেছে তা
হতেই থাকবে! পড়ে চুপচাপ বসে, ভাবতে থাকা ভাল যদি বা সংশোধন হয়! নিজেদের
পুনরুদ্ধারের কিছু দিক আছে এখানে, আছে কিছু সংকেত । বাকিটা পাঠকেরা পড়ুন আর বুঝে
নিন , আমার কথাগুলো/লেখাগুলো বিশ্বাস করারই বা দরকার কিসের!
আলোচিত গ্রন্থদ্বয়- ১) ভস্ম মাখি মাটিতে শুই / রাহুল পুরকায়স্থ/ ভাষালিপি
২) প্রেম/ বিভাস
রায়চৌধুরী/ বইতরণী
No comments:
Post a Comment