Friday, 16 March 2018

সুমন গুণ




প্রচ্ছন্ন আর অবধারিত তানিয়ার কবিতা 

এই সময়ের বাংলা কবিতায় অভিজ্ঞতার যে-পর্যটন আমরা লক্ষ করি, তানিয়া চক্রবর্তীর এই নতুন বইটিতেও তার স্বাভাবিক আর দক্ষ বেশ কিছু নজির পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে, অনুভূতির সচ্ছল চলাচল বইয়ের কবিতাগুলিকে ভেতর থেকে ধরে রেখেছে। তানিয়ার কবিতা আমি বেশ কিছুদিন ধরে পড়ছি, এবং আনন্দের সঙ্গে টের পাচ্ছি, ক্রমশ  নিজের কথা নিজের মতো করে বলার প্রকরণ তাঁর প্রায় করতলগত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে এই বইটিতে তাঁর উদ্যম সাফল্যের দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছে। আমি দু-তিনটি নজির পরপর তুলছি :

১। দায়হীনভাবে বসে আছি আড়ালে
এখানে জল অরাজক বলে
ঝড়ের জন্য বসে থাকি
তটের কাছে আসি নির্বিকার

২। ভারী হয়ে যাচ্ছে আলো
শিরা চাপতে চাপতে
উড়ে যাচ্ছে কাটা ধান আর পাট
আর ঈষৎ মননশীল নির্বোধ ভালোবাসায়
নায়কের ঘরে ঢুকে যাচ্ছে দলিত

৩। সারা ঘরে অর্জন করেছি ফড়িং এর ডানা
খাটের পাশে দানবীয় সূর্যশিশির
কাকবন্ধ্যা--- একটিমাত্র দুধে শিশু
ঊষালগ্নে মা বলতে গিয়ে সে থেমে গেছে

ঈশ্বর, উন্মাদ, ভালোবাসা, পুরুষ ইত্যাদি বিষয় তাঁকে ভাবায় বেশি। সম্পর্কের নানা মোচড়, টনাপোড়েন আর সংশয় নিয়েই  লেখা এই বইটির বেশিরভাগ কবিতা। শরীর তানিয়ার কবিতায় নানাভাবে বিষয় হয়ে উঠেছে। কখনও সরাসরি, কখনও আড়ালে আড়ালে  রক্তমাংসময় এই অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তবে, কখনই অভিজ্ঞতাকে প্রত্যক্ষ করে তোলেননি । আমাদের সময়ের মেয়েদের লেখা কবিতায় শরীর তার সবরকম সর্বনাশ নিয়ে ভাষা পেয়েছে। মেয়েরা তাঁদের প্রতিদিনের জীবনের যত অস্বস্তি আর অপমান, সুখ এবং আকাঙ্ক্ষা,  নৈঃশব্দ ও শীৎকার তাঁদের কবিতায় রাখঢাক না রেখে জানিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু তানিয়ার তাগিদ অন্যরকম। তিনি অনুভূতির সামনে একটা নিঃশব্দ পরদা টাঙিয়ে রেখেছেন। সেই অবধারিত আড়ালের ওপারে যে আকাশ, তার দিকে তাকিয়ে তাকার মধ্যে এক অন্যরকম উত্তেজনা আছে। এই উত্তেজনার আহ্লাদ তাঁর এই বইয়ের প্রায় সব কবিতা পড়ে টের পাওয়া যায়।
   
গ্রন্থ- আমিষ বিবাহ/ তানিয়া চক্রবর্তী/ আত্মজা/ ১১৮টাকা

No comments:

Post a Comment